ওমান সাগরের পাড় ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পাথুরে পাহাড়। পাহাড়গুলোর মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পথ। একটু পরপরই খেজুর গাছের সাড়ি। টিম হোটেল থেকে সেই পথ ধরেই ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠে আসে বাংলাদেশ দল। প্রকৃতি আর প্রাচুর্যের নান্দনিক উপস্থাপনা পথজুড়ে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের এখন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার মানসিক অবস্থাই হয়তো নেই। বিশ্বকাপে দলের পথচলাই যে শেষ হওয়ার জোগাড়!বোলিংয়ের কারণে খেলেছেন সৌম্য, ওমানের বিপক্ষে ফিরছেন নাঈম রান তাড়ায় বাংলাদেশের দুর্বলতা দেখছে ওমান স্কটল্যান্ডের কাছে হারের রেশ এখনও কাটেনি।
কিন্তু বিশ্বকাপের ফরম্যাটই এমন যে আরেকটি ম্যাচ দুয়ারে এসে গেছে। যে ম্যাচ হারলে বাংলাদেশের জন্য একরকম বন্ধ হয়ে যাবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার দুয়ার। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কজন ভাবতে পেরেছিল, ওমানের বিপক্ষে ম্যাচটিই হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই! প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর এটিই এখন বাস্তবতা। চাপ তাই পাহাড়সম। সেই উত্তাপ যথেষ্টই টের পাচ্ছে দল। এমনিতে বাংলাদেশ দলের নানা সফরে টিম হোটেলে থাকতেই পছন্দ করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দল হারলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার বৈঠকও নিয়মিত ঘটনা।
কোভিড পরিস্থিতিতে এখন আর টিম হোটেলে তার থাকার সুযোগ নেই। তবে স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পরদিন অনলাইনেই দলের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে বোর্ড প্রধান বেশ ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখেন বলেই খবর। ওমানের কাছেও হেরে গেলে ঝাঁঝ শুধু কথায় নয়, কাজেও যে ফুটে উঠবে, দলের কারও তা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চাপ যে বিস্তর, ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তা লুকালেন না কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে শঙ্কার চেয়ে সম্ভাবনার ছবিটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন তিনি। “বিশ্বকাপে সবসময়ই বিশাল চাপ থাকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ক্রিকেট পাগল দেশে। প্রতিটি পারফরম্যান্স এখানে খুঁটিয়ে দেখা হয়, প্রতিটি ভুল এখানে বড় করে দেখা হয়। ক্রিকেটাররা তাই চাপে আছে অবশ্যই। তবে দেশের হয়ে খেললে এটা থাকবেই। চাপকে আলিঙ্গন করে নিতে হবে তাদের এবং আশা করি তা ছেলেদের সেরাটা বের করে আনবে।” “আমরা জানি, আমাদের জন্য এটি বড় এক ম্যাচ, চাপ প্রচণ্ড। কিন্তু বিশ্বকাপে তো এসব থাকবেই। এই ধরনের ম্যাচই তো সবাই জিততে চায়। আমাদের ছেলেদের জন্যও আগামীকাল দারুণ সুযোগ।”
সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছে ওমানও। প্রথম ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে তারা। জয়টা সেখানে প্রত্যাশিতই ছিল। তবে যে দাপটে তারা জিতেছে, ব্যবধানটাও ফুটিয়ে তুলেছে পুরোপুরি। সঙ্গে একটি বার্তাও দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডের জন্য। বাংলাদেশকে হারাতে পারলে প্রথমবারের মতো বিশ্বআসরের মূল পর্বে খেলা একরকম প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। নিজেদের উজার করে দিয়েই চেষ্টা করবে তারা। তাড়না আর আত্মবিশ্বাসই শুধু নয়, স্কিলফুল ক্রিকেটারও তাদের আছে বেশ। ব্যাটিংয়ে জাতিন্দার সিং, আকিব ইলিয়াস, জিশান মাকসুদ, খাওয়ার আলিরা আছে। পেস বোলার বিলাল খান বেশ ভয়ঙ্কর। বলে গতি আর সুইং, দুটিই আছে এই বাঁহাতি পেসারের। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে আনতে পারেন। স্পিনে খাওয়ার ও জিশান বেশ কার্যকর।
সব মিলিয়ে বেশ গোছানো দল তারা। সঙ্গে চেনা মাঠ, চেনা উইকেটের সুবিধা তো আছেই। বাংলাদেশ কোচ ডমিঙ্গোও ওমানকে সমীহ করছেন বেশ। তবে ম্যাচ জয় আর পরের রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। “আমাদের কাজটা আগামীকাল সহজ হবে না মোটেও। ওমান খুব ভালো খেলছে। তারা পরের রাউন্ডে যেতে চায়। আমাদের জন্য কঠিন ম্যাচ হবে। তবে আমাদের ছেলেরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারে, আমাদের ভালো সুযোগ আছে।” “ছেলেরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে আমরা পরের ধাপে যেতে পারব। ছেলেদের ওপর আমার বিশ্বাস অনেক। বছরখানেক ধরেই কঠিন ম্যাচগুলো তারা উতরে গেছে। সবার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে আমরা মূল পর্বে যেতে পারব।”
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।